Photo de l'auteur

Œuvres de Jasim Uddin

Étiqueté

Partage des connaissances

Il n’existe pas encore de données Common Knowledge pour cet auteur. Vous pouvez aider.

Membres

Critiques

প্রাচ্য হোক কী পাশ্চাত্য, পৃথিবীর মোটামুটি সব অঞ্চলের রূপকথাতেই একটি বিষয়ে বেশ মিল। ভূগোল ভেদে রূপকথার অসম সাহসী সব রাজকুমারদের সব কালেই পুরুষত্বের চরম পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়েছে; অতুলনীয় রূপবতী সব রাজকন্যাদের অশুভের হাত হতে উদ্ধার করবার অভিযানের মাধ্যমে। রাজকন্যা জয়ের প্রধান প্রতিবন্ধকতাকে কোন দেশে মানুষ ড্রাগন হিসেবে দেখেছে, কোন দেশে দেখেছে ‘হাউ মাউ খাঁউ’ ডাইনী বুড়ী হিসেবে। পাশ্চাত্যের রূপকথার গল্পের ‘টুইস্ট’ কিংবা নায়কের হাতে খলনায়ক বধের বর্ণনার কাছে আমাদের গ্রাম বাংলার রূপকথার কাহিনীগুলো হয়ত এ দুই সমাজের অন্য আর দশটি বিষয়ের তুলনার মতই অকিঞ্চিৎকর মনে হবে। তবে ঘটনার অলঙ্কার বিহীন নিরাভরণ বাংলা রূপকথার নিজস্ব একটি আবেদন আছে। হলিউড এর প্রযুক্তি নির্ভর ছবি দেখে দেখে আমরা যারা চোখ পাকিয়ে ফেলেছি, তাঁদের কাছে এ গল্পগুলোর আবেদন এখন আর তেমন একটা নেই। স্বাভাবিক, বিংশ শতকের এই সময়ে যিনি ‘পাইরেটস অফ দি ক্যারিবিয়ান’ কিংবা ‘ইনসেপশন’ এর চোখ ধাঁধানো স্পেশাল ইফেক্ট এর সাথে পরিচিত হয়েছেন, তিনি কেন রাজকুমারের সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে রাজকন্যা উদ্ধারের গৎবাঁধা গল্পে মুগ্ধ হতে যাবেন? মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজ আমার কাছে ‘ইন্সেপশন’ যা, গত শতকে এই একই ভূখণ্ডের মানুষদের কাছে যাত্রাপালা আর রূপকথার গল্পের অভিযানগুলো অনেকটা তা-ই। পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন অখ্যাত বাংলার পল্লীসাহিত্য কে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছেন। জসীম উদ্‌দীন এর মত কিছু মানুষ লোকমুখে প্রচলিত সাহিত্যসমূহ কে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে এগিয়ে না এলে আমরা মনে হয় আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে জনপ্রিয় এই গল্পগুলো সম্পর্কে কোন ধারণাও রাখতে পারতাম না। গল্পগুলো কতটুকু কী মানসম্পন্ন সেটি ভিন্ন বিবেচনা, কিন্তু, ২০১৪ সালে বসে এখনের উচ্চ প্রযুক্তির চলচ্চিত্রের সাথে ১৯১৪ সালে প্রচলিত বর্তমানে আমাদের চোখে ভীষণ গ্রাম্য ঐ যাত্রা-পালার ফারাকটা তো ধরতে পারছি। ১০০ বছরে আমাদের রুচি কতটা বদলেছে সেটি এখন স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়। অভিমান করে থাকা কোন শিশুর মান ভাঙাতে সে সময়ে তার বাবাকে তাকে যাত্রা দেখাতে নিয়ে যেতে হত। আজ সেই একই বয়েসের শিশুকে সিজিআই প্রযুক্তির ‘শ্রেক’ ছবির ডিভিডি কিনে দিতে হচ্ছে। ১০০ বছর পরের শিশুর কাছে শ্রেক খুব বিরক্তিকর হয়ে যাবে নিশ্চয়ই। কল্পনা করা যায়, তার হাতে তখন যা তুলে দেয়া হবে সেটি কী সাংঘাতিক একটি বিষয় হবে! (অন্তত আমাদের চোখে)

‘মধুমালা’র গল্প খুব আকর্ষণীয় কিছু নয়। অত্যন্ত সরলরৈখিক গতিতে এগিয়েছে ঘটনা। এটি জসীম উদ্‌দীন এর মৌলিক কোন গল্পও নয়। পল্লীর প্রচলিত রূপকথাকেই তিনি তাঁর নিজের ভঙ্গিমায় নাটক আকারে লিখেছেন। ১৬ বছর পাতালে কাটিয়ে দেয়া এক রাজকুমার আর বহুদূরের এক দেশের রাজকন্যা একদিন হঠাৎ একে অপরের স্বপ্নে দেখা দেয়। অতপরঃ প্রেম এবং রাজপুত্রের অনতিবিলম্বে রাজকন্যার দেশের দিকে অভিযান শুরু। ব্যাস! এই! এই অতি সরলীকরণে দুষ্ট গল্পটিই মোটামুটি প্রাণ পেয়েছে জসীম উদ্‌দীন এর লেখনীতে। মঞ্চের জন্য লেখা নাটকটির সংলাপগুলো কিন্তু বেশ প্রাণবন্ত। প্রায়ই মনে হয়েছে নাটকটি আমি চোখের সামনেই মঞ্চস্থ হতে দেখছি। এখানেই পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন এর কৃতিত্ব। গল্পের গভীরতা কতটুকু সেটি রূপকথার এই নাটকে খুব বড় কোন নিয়ামক বোধহয় নয়। একটি ব্যাপার অবশ্য বেশ চোখে পড়বার মতন। রাজপুত্র শুধুমাত্র রাজকন্যার অনিন্দ্যসুন্দর মুখ স্বপ্নে দেখেই ঝড় বাদল উপেক্ষা করে জাহাজ চালিয়ে রাজকন্যার দেশে পৌঁছে। পথের ঝড়ে রাজপুত্রের প্রায় সব সফরসঙ্গীই ভেসে যায়। প্রেমের জন্য কেবল রূপ আর ক্ষমতা পেলে স্বেচ্ছাচার, এই দুটি বিষয় বেশ ভালোভাবেই উঁকি দেয় গল্পের মাঝে মাঝে। শিশুদের ভেতর একধরনের বর্ণবাদ লক্ষ্য করা যায়। তুলনামূলক ‘অসুন্দর’ বন্ধুকে অনেকসময় তারা এড়িয়ে চলে। সুন্দরী রাজকন্যার জন্য রাজপুত্রের কঠিন ত্যাগ শিশুদের শুধু সুন্দর একটি মুখের জন্যই ত্যাগ করতে শেখায় কী না কে জানে!

রূপকথার গল্প সাধারণ মানুষেরাই বানায় মুখে মুখে, যে গল্পগুলোর নায়ক নায়িকারা হন রাজা-রানী কিংবা রাজপুত্র-রাজকন্যারা। আবার, পৃথিবীর ইতিহাসে সব অঞ্চলের রাজপ্রথাই মানুষকে শোষণ করেছে। রাজদণ্ডের নিচে সব কালেই মানুষ অত্যাচারিত হয়েছে। তবু দিনশেষে তার কল্পনার গল্পগুলোতে সেই রাজাদেরই সে নায়কের আসনে বসিয়েছে। স্বপ্ন দেখেছে সবসময়, ভালো রাজা কোথাও আছেন! মানব মনস্তত্ত্ব, কী অদ্ভুত! তাই না?
… (plus d'informations)
 
Signalé
Shaker07 | May 18, 2017 |

Statistiques

Œuvres
8
Membres
10
Popularité
#908,816
Évaluation
3.9
Critiques
1